পাকিস্তান আমলের তুলনায় দুর্নীতি ‘পুরো উল্টো পথে গেছে’: জামায়াত আমির
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, দেশে দুর্নীতির বিস্তার এখন এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, পাকিস্তান আমলের তুলনায় অবস্থা পুরো উল্টো হয়ে গেছে। তার ভাষায়, “আগে কোনো ঘুষখোর অফিসার এলে জেলাজুড়ে মানুষ জানত, এখন কোনো সৎ অফিসার এলে মানুষ অবাক হয়—এই সমাজ দুর্নীতিকে নিত্যসঙ্গী বানিয়ে ফেলেছে।”
শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে ফেরার পথে লন্ডনের এক হোটেলে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ মন্তব্য করেন।
জামায়াত আমির বলেন, “দুর্নীতিকে গলা টিপে ধরা না গেলে সমাজ বাঁচবে না। শিক্ষা থেকে প্রশাসন—সবখানেই অনিয়ম ও বৈষম্য ছড়িয়ে পড়েছে। সুবিচার এখন দুর্লভ। এই সমাজ আর সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারছে না।”
তিনি বলেন, “জুলাই অভ্যুত্থানের পর মানুষ ভেবেছিল, সমাজে আর অনিয়ম ও বৈষম্য থাকবে না। কিন্তু যেখানেই যাবেন, দুর্নীতিবাজরাই প্রভাব বিস্তার করছে। মানুষের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়নি।”
আসন্ন নির্বাচনে প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিয়ে শফিকুর রহমান বলেন, “প্রবাসীদের ভোটার হতে নানা হয়রানি করা হচ্ছে। কারও বার্থ সার্টিফিকেট বা ইউটিলিটি বিল চাইছে—যা অনেকের পক্ষে দেওয়া সম্ভব নয়। গ্রামে যাদের ঘরবাড়ি নেই, তারা বিদ্যুতের বিল দেখাবে কীভাবে?”
তিনি অভিযোগ করেন, “ঢাকা থেকে বার্থ সার্টিফিকেট নিতে গেলেও ঘুষ না দিলে কাজ হয় না। এটা দেশের বাস্তব চিত্র।”
জামায়াত আমির বলেন, “বিরোধী দলে থাকলে কেউ সামান্য সেবা দিতে পারে, কিন্তু ক্ষমতায় গেলে দায়িত্বশীলতা ও জবাবদিহিতা না থাকলে দুর্নীতি বেড়ে যায়। সেবা করার সুযোগ থাকা মানুষ যদি বিবেকবোধ হারায়, তবে তারা শুধু নিজেদের স্বার্থে লিপ্ত হয়।”
তিনি সমাজ পরিবর্তনের আহ্বান জানিয়ে বলেন, “আমরা ভালো কাজ করলে আপনাদের ভালোবাসা ও সহযোগিতা চাইব। তবে যদি ভুল করি, সমালোচনাও চাইব। ভালোবাসা মানুষকে এগিয়ে দেয়, কিন্তু সমালোচনা তার চেয়েও বেশি শেখায়।”
গুমের ঘটনায় গ্রেপ্তার সেনা কর্মকর্তাদের বিচার অব্যাহত থাকবে কি না—এক সাংবাদিকের প্রশ্নে শফিকুর রহমান বলেন, “আমরা অবিচার চাই না, কিন্তু অপরাধ হলে ন্যায়বিচার অবশ্যই হতে হবে। আমাদের অঙ্গীকারের একটি হলো সমাজে সর্বস্তরে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা।”
গণভোট নিয়ে তিনি বলেন, “আমাদের অবস্থান স্পষ্ট—গণভোট আগে হতে হবে, নয়তো এর কোনো মূল্য নেই।”
সফর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “স্টেট ডিপার্টমেন্টসহ বিভিন্ন স্থানে আমরা আলোচনা করেছি, কিন্তু কোনো দলের জন্য নয়, দেশের স্বার্থে। আমরা চাই, বাংলাদেশ যেন আন্তর্জাতিকভাবে সম্মান পায়।”
তিনি জানান, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে জামায়াত কোনো ইশতেহার প্রকাশ করবে না। “আমরা মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দেব না,”—বলেন দলটির আমির।
এ সময় যুক্তরাজ্য জামায়াতে ইসলামীর মুখপাত্র ব্যারিস্টার আবু বকর মোল্লাহ এবং সেইভ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার নজরুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
মন্তব্য করুন





