নির্বাচনের ফাঁদে অমর একুশে বইমেলা, অনিশ্চয়তায় আয়োজক ও প্রকাশকরা
জাতীয় নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ না হওয়ায় অনিশ্চয়তায় পড়েছে ২০২৬ সালের অমর একুশে বইমেলা। ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচন হলে বইমেলা আয়োজন পিছিয়ে যেতে পারে, আর নির্বাচন বিলম্বিত হলে ১ ফেব্রুয়ারি থেকেই মেলা শুরু করার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাতে পারেনি বাংলা একাডেমি।
এরই মধ্যে ‘একুশে বইমেলা সংগ্রাম পরিষদ’ সরকারকে ৪ নভেম্বরের মধ্যে স্পষ্ট ঘোষণা দিতে আল্টিমেটাম দিয়েছে। সংগঠনের নেতারা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন—সময়সীমার মধ্যে সিদ্ধান্ত না এলে কবি-লেখকরা আন্দোলনে নামবেন।
বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম জানিয়েছেন, “ফেব্রুয়ারির প্রথম দিকে নির্বাচন হলে শেষ দিকে মেলা শুরু করা হবে, আর নির্বাচন পিছিয়ে গেলে ১ ফেব্রুয়ারি থেকেই মেলা হবে।” তবে অক্টোবরের শেষ দিন পর্যন্তও তিনি সুনির্দিষ্ট তারিখ জানাতে পারেননি।
বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির (বাপুস) সভাপতি রেজাউল করিম বাদশা বলেন, “সরকারের সহযোগিতা ছাড়া মেলা করা সম্ভব নয়। প্রশাসন এখন নির্বাচনের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত। আমরা চাইলে ছুটির মধ্যেও মেলা আয়োজন করতে পারবো, কিন্তু অনুমতি দরকার।”
এর আগে নির্বাচন ও রমজানের কথা বিবেচনা করে বাংলা একাডেমি ২০২৫ সালের ১৭ ডিসেম্বর থেকে ২০২৬ সালের ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত মেলা আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছিল। কিন্তু ফেব্রুয়ারির ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট উপেক্ষা করে ডিসেম্বরে বইমেলা করার সিদ্ধান্তে লেখক ও সংস্কৃতিকর্মীরা তীব্র আপত্তি জানান। সমালোচনার মুখে শেষ পর্যন্ত একাডেমি ওই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে।
বাংলা একাডেমি পরে জানায়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিরাপত্তা সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বইমেলা স্থগিত রাখা হয়েছে, এবং নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে নতুন তারিখ নির্ধারণ করা হবে।
অন্যদিকে, কবি মোহন রায়হানের নেতৃত্বে একুশে বইমেলা সংগ্রাম পরিষদ বলছে—“নির্বাচন যাই হোক, ফেব্রুয়ারির বইমেলা আমাদের ঐতিহ্যের অংশ। সরকার যদি ঘোষণা না দেয়, লেখক সমাজ রাস্তায় নামবে।”
বাপুসের সাবেক সহ-সভাপতি ও প্রকাশক শ্যামল পাল মনে করেন, ফেব্রুয়ারির শুরুতে মেলা শুরু করাই সবচেয়ে যৌক্তিক। “এতে ঐতিহ্য অক্ষুণ্ন থাকবে এবং ঈদের আগেই আয়োজন শেষ করা সম্ভব হবে,” বলেন তিনি।
লেখক ও কবি ড. শোয়াইব জিবরান বলেন, “নির্বাচনের সঙ্গে বইমেলার সম্পর্ক নেই। এটি কেবল একটি ব্যবসায়িক অনুষ্ঠান নয়, আমাদের জাতিসত্তা ও সাংস্কৃতিক স্মৃতির অংশ। নির্বাচনের অজুহাতে এই ঐতিহ্যকে ফাঁদে ফেলা উচিত নয়।”
প্রসঙ্গত, ১৯৭২ সালে চিত্তরঞ্জন সাহার উদ্যোগে শুরু হওয়া অমর একুশে বইমেলা ১৯৭৮ সাল থেকে বাংলা একাডেমির আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। প্রতিবছর ফেব্রুয়ারির ১ তারিখ থেকে মাসব্যাপী মেলাটি বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত হয়। এবার নির্বাচনের অনিশ্চয়তায় এই ঐতিহ্যবাহী আয়োজনের ভবিষ্যৎ ঝুলে আছে সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর।
মন্তব্য করুন



