রাবি অধ্যাপকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার দাবিতে রাকসুর স্মারকলিপি প্রদান

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক আ. আল মামুনের হিজাব নিয়ে ‘বিতর্কিত’ মন্তব্যের প্রতিবাদে তার বিচারের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও বিভাগীয় কর্তৃপক্ষের কাছে স্মারকলিপি জমা দিয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (রাকসু) প্রতিনিধিরা।

মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) বেলা ১১টার দিকে রাকসুর নেতারা উপউপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মাঈন উদ্দিন খান এবং গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. মোজাম্মেল হোসেন বকুলের কাছে স্মারকলিপিটি প্রদান করেন।

স্মারকলিপিতে বলা হয়, ড. আ. আল মামুন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রাকসু নির্বাচনে বিজয়ী নারী প্রতিনিধিদের ছবি, পোশাক, ধর্মীয় বিশ্বাস ও ব্যক্তিস্বাধীনতা নিয়ে অবমাননাকর ও বিদ্বেষমূলক মন্তব্য করেছেন। তিনি পূর্বের পোস্টগুলোতেও ‘বোরকা’, ‘কাঠমোল্লা’, ‘মদ’, ‘টু-কোয়াটার’ ও ‘সেক্সুয়াল রেভল্যুশন’-এর মতো শব্দ ব্যবহার করে উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়েছেন, যা শিক্ষকতার নৈতিকতা ও পেশাগত দায়িত্ববোধের পরিপন্থী।

স্মারকলিপিতে রাকসু পাঁচ দফা দাবি উত্থাপন করে—এর মধ্যে রয়েছে:
১️⃣ অধ্যাপক আ. আল মামুনের প্রকাশ্যে ক্ষমা প্রার্থনা,
২️⃣ ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা,
৩️⃣ বিদ্বেষমূলক মন্তব্যের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক নীতিমালা প্রণয়ন,
৪️⃣ ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে কার্যকর পদক্ষেপ,
৫️⃣ সহিষ্ণুতা ও ধর্মীয় স্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধাবোধ বাড়াতে সচেতনতামূলক কার্যক্রম আয়োজন।

নারীবিষয়ক সম্পাদক সৈয়দা হাফসা বলেন, “গতকাল রাতেই আমরা তার মন্তব্যের তীব্র নিন্দা জানিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আন্দোলন করেছি। আজ অফিসিয়ালি উপাচার্য বরাবর পাঁচ দফা দাবি সম্বলিত স্মারকলিপি জমা দিয়েছি।” তিনি আরও যোগ করেন, “আল মামুন স্যার শুধু আমাদের নয়, বরং বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচিত প্রতিনিধিদেরকেও অপমান করেছেন। এটি মুসলিম নারীদের জন্য চরম অবমাননাকর এবং একজন শিক্ষকের কাছ থেকে এমন আচরণ অগ্রহণযোগ্য। আমরা চাই, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দ্রুত ব্যবস্থা নিক যাতে ভবিষ্যতে কেউ এমন মন্তব্য করার সাহস না পায়।”

এ বিষয়ে উপউপাচার্য অধ্যাপক ড. মাঈন উদ্দিন খান বলেন, “আমরাও আল মামুন স্যারের ফেসবুক পোস্টটি দেখেছি। এটি শিক্ষক হিসেবে শোভন নয় এবং সীমালঙ্ঘন হয়েছে বলে মনে করি। তিনি ছাত্র প্রতিনিধিদের নিয়ে ব্যঙ্গ করেছেন, যা অনভিপ্রেত এবং শিক্ষাঙ্গনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির প্রচেষ্টা হিসেবে দেখা যেতে পারে।”

তিনি আরও বলেন, “শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ আমরা লক্ষ্য করেছি এবং আজ তাদের স্মারকলিপিও পেয়েছি। উপাচার্য ফিরে এলে বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট বা যথাযথ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। নিয়ম অনুযায়ী যা করণীয়, তা অবশ্যই করা হবে।”

স্মারকলিপি প্রদানের সময় উপস্থিত ছিলেন রাকসুর সাধারণ সম্পাদক সালাউদ্দিন আম্মার, ক্রীড়া সম্পাদক নারগিস খাতুন, নারী বিষয়ক সম্পাদক সৈয়দা হাফসা, সহসম্পাদক সামিয়া জাহান, মিডিয়া সম্পাদক মুজাহিদ ইসলাম, সহমিডিয়া সম্পাদক আসাদুল্লাহ গালিবসহ বিভিন্ন হল সংসদের নেতাকর্মীরা।